চুল আমাদের নারী কিংবা পুরুষ সকলেরই অন্যতম সৌন্দর্যের প্রতীক। চুলের যত্ন যদি সঠিকভাবে নেয়া যায়, তাহলে চুল হয়ে ওঠে ঝলমলে আর সুন্দর। তবে, কিছু স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং কিছু সাধারণ এক্সারসাইজ করা চুলের সৌন্দর্যকে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়৷ আর, চুল পড়া কমানোর পাশাপাশি, নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। আজকে আমরা আলোচনা করবো, সেসকল খাবার এবং এক্সারসাইজ সম্পর্কে, যা প্রয়োগ করার ফলে নতুন চুল গজাবে।
আমাদের চুলের যত্ন নেয়ার জন্য বেশ কিছু পুষ্টি উপাদানের দরকার হয়। এগুলোর মাঝে আছে-
- ভিটামিন সি
- ভিটামিন ই
- ভিটামিন বি
- প্রোটিন
- বায়োটিন
- সেলেনিয়াম
- ওমেগা 6 ফ্যাটি এসিড
- জিংক
- ম্যাগনেসিয়াম
- ফলিক
- আয়রন
এসব পুষ্টি উপাদানগুলো যে খাবারে সহজেই পাওয়া যায়, সেগুলো খেলে আমাদের নতুন চুল গজায়। এসকল খাবারের মাঝে, আমিষ, ভিটামিন কিংবা খনিজ লবণ সব কিছুই আছে। নিচে এগুলেরা মাঝ থেকে কিছু সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
যে সকল খাবার নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে
১. ডিম
ডিম আমাদের দেশে অতি সহজলভ্য একটি খাবার। বাসা বাড়িতে সহজেই পাওয়া যায় এটি। ডিম আমিষ জাতীয় খাদ্য। ডিমে আছে প্রোটিন এবং বায়োটিন।
চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করার জন্য, অর্থাৎ নতুন চুল গজানোর জন্য অত্যাবশ্যকীয় একটি উপাদান হলো সেলেনিয়াম। আর ডিমে এটি বিদ্যমান। তাই, চুল ঘন আর মজবুত করতে ডিমের কোনো বিকল্প নেই!
২. বাদাম
আমাদের দেশে কাজুবাদাম, কাঠবাদাম, পেস্তাবাদাম সহ আরো নানান জাতের বাদামের দেখা পাওয়া যায়৷ যদিও আমাদের দেশে সবচেয়ে সহজলভ্য চীনাবাদাম।
বাদামে আছে ওমেগা 6 ফ্যাটি অ্যাসিড, যা চুলকে ঝলমলে করো তোলে, আর নতুন চুল গজাতে সহায়তা করে। তাছাড়াও, বাদামে আছে-
- ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিড,
- ম্যাগনেসিয়াম,
- ভিটামিন ই,
- ভিটামিন বি,
- জিংক।
এই উপাদানগুলো নতুন চুল গজাতে সহায়তা করে।
৩. নারিকেল
নারিকেল গাছ নেই, বাংলাদেশে এমন স্থানের দেখা পাওয়া দুষ্কর। তবে, সহজলভ্য এই নারিকেলে আছে বিভিন্ন প্রকার পুষ্টি উপদান। এমনকি, নারিকেল তেল থেকেও এই পুষ্টি উপাদান পাওয়া সম্ভব। সাধারণত, মার্কেট থেকে আমরা যে বোতলজাত নারিকেল তেল কিনি, তা বেশির সময় ই ভেজাল, কেমিকেলি ট্রিটেড যা চুলের জন্য তেমন উপকার করে না। তাই আমরা নারিকেল তেল কে তেমন গুরুত্ব দেই না। কিন্তু ভাল মানের এক্সট্রা ভারজিন গ্রেড নারিকেল তেল কিন্তু ভালই উপকার করে।
৪. সূর্যমুখী বীজ
একটু খোঁজ করলেই সূর্যমুখী বীজ পাওয়া যায় যেকোনো স্থানে। সূর্যমুখী বীজ, ভিটামিন ই এর বিরাট উৎস। অবাক করা বিষয় হলো, মাত্র ২৮, গ্রাম সূর্যমুখী বীজ, একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যকৃতির দিনের ৫০ শতাংশ ভিটামিন ই এর চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম।
এর পাশাপাশি, এতে আছে ভিটামিন বি। তাই, নতুন চুল গজাতে সূর্যমুখী বীজকে দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত।
৫. আখরোট এবং কাঠবাদাম
আখরোট আমাদের চুলের উপর এক প্রকারের সুরক্ষা প্রলেপ হিসেবে কাজ করে। আর, নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। একই রকমভাবে, কাঠবাদামও আমাদের চুলের গঠন সুন্দর করে এবং নতুন চুল গজাতে ভূমিকা রাখে।
৬. তিসীর বীজ
নিয়মিত খাদ্যতালিকায় তিসীর বীজ রাখলে শরীর আর চুল দুটোর জন্যই ভালো হয় (মুদির দোকানগুলোতে খুব সহজেই তিসীর বীজ পাওয়া যায়)। এতে আছে, বিভিন্ন ভিটামিন আর পুষ্টি উপাদান, যা চুলের গোড়া থেকে পুষ্টি যোগায়।
৭. ওটমিল
ওটমিলে নিম্নোক্ত পুষ্টি উপাদানগুলো আছে।
- আয়রন,
- জিঙ্ক,
- ফাইবার,
- ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড,
- পলি-আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড।
এই উপাদানগুলো নতুন চুল গজাতে এবং চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে সহায়ক।
৮. বেরি
বিভিন্ন জাতের বেরিও আমাদের চুলের জন্য দারুণ উপকারী। আমাদের দেশে স্ট্রবেরি এবং চেরি ফল এই দুই প্রকার বেরিই বেশি দেখা যায়। এগুলোতে আছে, ভিটামিন সি এবং বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস।
কারো চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে, এবং নতুন চুল গজাতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দারুণ উপকারী। সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, স্ট্রবেরির মতো সব জাতের বেরিতেই ভিটামিন সি আছে।
৯. ভিটামুন সি যুক্ত ফল
সাধারণ, যে ফলগুলো সামান্য হলেও টক, সেগুলোতে ভিটামিন সি আছে, যদিও এর ব্যতিক্রম আছে। যেমন- কমলালেবু, লেবু, মাল্টা, পেয়ারা। এসব ফলে আয়রন সহ আরো বিভিন্ন উপাদান আছে। যা, চুলের গোড়া পর্যন্ত পুষ্টি যোগায়, এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
১০. শাকসবজি এবং ডাল
আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় ডাল, শিম, মটরশুঁটির কোনোটা তো থাকেই। আর এগুলো আমাদের শরীর এবং চুলের জন্য দরকারি পৃরোটিন সরবরাহ করে। এগুলোতে আরো আছে,
- জিংক,
- খাদ্যআঁশ,
- আয়রন,
- বায়োটিন,
- ফলেট।
যা আমাদের চুলকে একদম ভেতর থেকে মজবুত করে গড়ে তোলে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
১১.ঘি
ঘি আমাদের দেশের একটি জনপ্রিয় খাবার। কিন্তু আমরা অনেকেই ঘি খেতে চাই না। চুলের জন্য ঘি অনেক উপকারি একটি খাবার। ঘি চুলের জন্য দরকারী পুষ্টি গুনে ভরপুর। এতে আছে
ভিটামিন এ
ভিরটামিন ডি
ভিটামিন কে
ভিটামিন বি ১২
ভিটামিন ই
ওমেগা-৩
খাবারে নিয়মিত ঘি সংযোজন করলে আমরা অনেক রোগ থেকেও যেমন মুক্তি পাব তেমনি আমাদের চুলও ভালো থাকবে।
উপরে আমরা যেসকল খাদ্য সম্পর্কে আলোচনা করলান, তার মাঝে প্রতিটিতেই বিভিন্ন ধরণের পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। তাছাড়া, নতুন চুল গজাতে যে উপাদানটির সর্বাধিক প্রয়োজন হয়, তা হলো ভিটামিন সি। আর ভিটামিন সি এর বেশ কয়েকটি উৎস নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি।
বাংলাদেশে সহজেই পাওয়া যায়, এমন খাদ্যগুলো থেকেও গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান পাওয়া সম্ভব, যা নতুন চুল গজাতে সহায়তা করে।
নতুন চুল গজানোর জন্য চুলের বেশ কয়েকটি উপাদান থেকে মুক্তির দরকার হয়। অর্থাৎ, যে উপাদানগুলো চুলের জন্য ক্ষতিকর, তা বাদ দিতে হবে। সাদা চালের ভাত, রুটি, চিনি এগুলোর মাঝে অন্যতম। এগুলো খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে শর্করার পরিমাণ কিছুটা বেড়ে যায়। যা নতুন চুল গজাতে বাধা দেয়।
তাই, এগুলোর পরিবর্তে আমাদের উচিত লাল চালের ভাত খাওয়ার চেষ্টা করা। আর চিনি যেহেতু সম্পূর্ণ খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দেয়া সম্ভব না, তাই চিনি খেতে হবে খুবই হালকা পরিমাণে।
তবে, যত স্বাস্থ্যকর খাবারই খাই না কেনো, আমাূের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি রাখতে হবে। কারণ, সঠিক অনুপাতে পানি পান করার ফলে আমাদের শরীরের কিছু ব্যালান্স ঠিক থাকে। এবং চুলের পুষ্টি জোগাতে পানির গুরুত্ব অপরিসীম।
যে সকল এক্সচাসাইজ নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে
স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার পাশাপাশি, কিছু ব্যায়াম বা এক্সারসাইজ আছে, যেগুলো খুব সহজেই আমাদের চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে সহায়ক। এর মাঝে একটি হলো পুশ আপ। এটা সম্পর্কে কম বেশি আমরা সবাই-ই জানি।
হাত এবং পা ভূমিতে ঠেকিয়ে পুশ আপ দেয়ার ফলে আমাদের শরীরের রক্ত সঞ্চালন অতি দ্রুত বৃদ্ধি পায়। আর রক্ত সঞ্চালিত হওয়ার কারণে, আমাদের মাথার ত্বকে তা ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ফলস্বরূপ, আমাদের চুল স্বাভাবিকভাবোই দ্রুত বাড়তে থাকে এবং নতুন চুল গজায়।
ভারোত্তোলন করাও নতুন চুল গজাতে এক ধরনের ভালো ব্যায়াম। ভারোত্তলন করার ফলে আমাদের শরীরের পেশি শক্তি বাড়ে। এবং আমাদের সমগ্র দেহে রক্ত সঞ্চালন ঠিক ভাবে হয়। আর এটি নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
এছাড়াও, আরে কয়েকটি সাধারণ এক্সারসাইজ আছে, যেগুলোকে অভ্যাসে পরিণত করলে চুল পড়া কমে যাবে এবং নতুন চুলও গজাবে।
৩. ম্যাসেজ
চুলের জন্য আমার কাছে সবচেেয় বেশি পছন্দ স্ক্যালপে ম্যাসেজ। আমরা যদি সপ্তাহে এটলিস্ট তিনদিন খুব ভাল ভাবে তেল মালিশ করি তাহলে স্ক্যাল্প এ অনেক ভাল ম্যাসেজ হবে। এতে হেয়ার ফলিকলে রক্ত চলাচল বাড়বে আর চুলের গোড়ায় পুষ্টি জোগাবে। আর তেলের পুষ্টিগুনও ভাল ভাবে ফলিকলে পৌছাবে।
২. হাঁটা
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস করতে হবে। তবল এটা খুব দ্রুত-ও নয়, আবার খুব ধীরে-ও নয়। স্বাভাবিক গতিতে হাঁটতে হবে, যাতে এটা উপভোগ্য হয়। নিয়মিত হাঁটার ফলে শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সচল থাকে, এবং দেহে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকে বলে, দেহে সঠিক তাপমাত্রা বিদ্যমান থাকে। এটা নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
বি.দ্র.: তবে, একটা বিষয়ের প্রতি খেয়াল রাখা দরকার, যেন চুলের মাঝে ঘাম না ছড়ায়। এতে নতুন চুল তো গজাবে না, এবং চুল পড় বাড়বে।
৩. সাইকেল চালানো
সাইকেল চালানো-ও নতুন চুল গজানোর জন্য দারুণ এবং কার্যকরী একটি এক্সারসাইজ। পরোক্ষভাবে এটিও নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।