বয়স ৩০ পার হতেই মাথায় টাকের উপস্থিতি হালকা বুঝা যাচ্ছে! চুল দিনদিন পাতলা হয়ে ঝরে যাচ্ছে!ছেলেদের যে মাথায় চুল নিয়ে কত বিড়ম্বনার শিকার হতে হয় তা না বলাই বাহুল্য! আসলে মেয়েদের চুলের প্রতি নিয়মিত যত্নের যে ধারাবাহিকতা দেখা যায়, একজন ছেলের বরং চুলের যত্নের প্রতি অবহেলার দিকটাই বেশি নজরে পড়ে! বর্তমান তরুন হোক কিংবা যুবক তাদের চুলের কাট নিয়ে যতটা সময় ব্যায় করে তার ১০% ও চুলের যত্নে ব্যায় করেনা।
ছেলেদের চুলের যত সমস্যা দেখা যায় তার মধ্যে অন্যতম চুল পাতলা হয়ে যাওয়া, চুলপড়া, চুলে খুশকির উপস্থিতি,চুলে টাক, রুস্ক খুস্ক চুল, অল্প বয়সে চুল সাদা হওয়া! মুলত, অল্প কিছু যত্নের মাধ্যমেই এইসব সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে। তবে চলুন সমাধানগুলো জেনে নেয়া যাক!
ছেলেদের চুলের যত সমস্যাঃ জেনে নিন প্রধান কারন, সমাধান ও কার্যকরী হেয়ার প্যাক
ব্যস্ততা ও কাজের চাপে যদি আপনার চুলের সৌন্দর্য হারিয়ে যায়, তবে চুলের যত্ন নেয়ার জন্য প্রতিদিনের রুটিনে কিছু সময় বরাদ্দ রাখুন। নিম্নে ছেলেদের চুলের প্রধান সমস্যাগুলোর কারন, সমাধান ও কার্যকরী হেয়ার প্যাকের একটি চার্ট দেয়া হলো! এতে আপনি সংক্ষিপ্ত আকারে চুলের যত্ন সম্পর্কে আইডিয়া পাবেন-
চুলের সমস্যা | প্রধান কারনসমুহ | সমাধান | কার্যকরী হেয়ার প্যাক |
১. চুল ঝরে পড়া/ মাথায় টাক | বংশগত, হরমোনজনিত কারন, ঔষধের সাইড ইফেক্ট, মানসিক স্ট্রেস অথবা ডিপ্রেশন | খাদ্যাভাসে প্রোটিন ও অমেগাযুক্ত খাবার।
স্ট্রেস ও দুশ্চিন্তা কমানো |
পেয়াজের রস,
প্রোটিন প্যাক অ্যালোভেরা |
২. চুলে অতিরিক্ত খুশকি | স্কাল্পে ম্যালাসেজিয়া নামক ছত্রাকের আক্রমন। | এন্টি ডেনড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার। সপ্তাহে ৩দিন চুল ভালমত পরিষ্কার করা। | অ্যালোভেরা জেল |
৩. চুলের রুক্ষতা | চুলে গরম পানি ব্যবহার, সপ্তাহে ৩দিনের বেশি শ্যাম্পু করা | ময়েশ্চারাইজারযুক্ত শ্যাম্পু এবং শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার ব্যবহার। | -অলিভ অয়েল, কয়াস্টর অয়েল ব্যবহার
-লেবুর রস |
৪. ধুসর বা সাদা চুল | বংশগত, বয়স বৃদ্ধির সাথে মেলানিন তেরী হ্রাস অথবা পুষ্টির ঘাটতি। | প্রোটিন, বিটামিন বি -১২ এবং অমেগা যুক্ত খাবার খাওয়া। | -মেহেদী প্যাক,
-পেয়াজের রস, -ব্ল্যাক টি -নারকেল তেল। |
১.চুল ঝড়ে পড়া
প্রায় অধিকাংশ পুরুষই অল্প বয়সে চুল ঝড়ে পড়ায় মানসিকভাবে বিষন্নতায় ভোগে! একসময় স্কাল্পের মাঝের ফাঁকা অংশ চোখে পড়ে যা চুলে টাক বলে পরিচিত। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ৮০% পুরুষই তাদের প্রাত্যহিক জীবনে চুল ঝড়ে পড়া সমস্যার সাথে সম্পর্কিত। ৩০ বছর পার হতে না হতেই ২৫% মানুষের মাথায় টাক হওয়া দৃশ্যমান হয়৷ ৫০ বছরের কাছাকাছি ৫০শতাংশ ছেলেদের চুল ঝড়ে পড়ার প্রবনতা বাড়তে থাকে এবং ৬০ বছরে পুরোপুরি টাক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে৷
প্রধান কারনঃ
• বংশগত পরম্পরা শুধু স্বভাবগত আচরনেই নয়, বরং আপনার চুলের ধরন, চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি এমনকি চুল ঝরে পড়ায় ও অনেকাংশে প্রভাব ফেলে। এক্ষেত্রে আপনার বাবা, দাদা, চাচা অথবা পুর্ববর্তী প্রজন্মের খুব জলদি ই টাক হয়ে থাকলে, আপনার ও টাকের সম্ভাবনা খুব বেশি।
• হরমোনজনিত কারন যেমন অ্যান্ড্রোজেনিক, টেস্টোস্টেরন, ডিএইচটি ইত্যাদি হেয়ার ফলিকলের উপর কাজ করে এবং এতে চুল পড়া বৃদ্ধি পেতে থাকে।
• বিভিন্ন রোগের ঔষুধ যেমন, ক্যান্সার, আথ্রাইটিস, মানসিক চাপ ইত্যাদি সেবনেও অনেক সময় চুল পড়া কিংবা টাক সমস্যা হতে পারে।
• মানসিক চাপ, ডিপ্রশন, অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার প্রভাব চুল পড়ার কারন হিসেবে বিবেচিত।
• শরীরে পুষ্টির ঘাটতি ও অনেকাংশে চুল পড়া বৃদ্ধি করে।
সমাধানঃ
• নিজেকে অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা কিংবা ডিপ্রেশন থেকে সরিয়ে নিন। এতে আপনার চুল পড়া অনেকাংশেই কমে যাবে।
• নিজের খ্যাদাভাসে প্রোটিনযুক্ত খাবার রাখুন। বিশেষ করে অমেগা-৩ ও ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ খাবার ব্যাপক ভুমিকা রাখে৷ সাথে সবুজ শাকসবজি ও ফলমুল খাওয়ার অভ্যাস করুন।
• ভালো মানের হারবাল অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।
• ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে আয়রন, ভিটামিন ডি, ভিটামিন-সি, বায়োটিন, জিংক এসব ট্যাবলেট সেবন করতে পারেন।
• ৫০ এর অধিক বয়স হলে, টাক সমস্যার উন্নতিকরনে চিকিৎসকের শরন্নাপন্ন হতে পারেন।
বেস্ট এন্টি হেয়ার ফল অয়েল দেখতে ক্লিক করুন
২.চুলে অতিরিক্ত খুশকি
দীর্ঘক্ষন বাইরে থাকা, রোদে ছুটাছুটি এসব ব্যস্ততায় চুলের যখন খারাপ অবস্থা, আপনি তখন বাসায় ফিরে আপনার পোশাকে খুশকির উপস্থিতি লক্ষ্য করেন! মেয়েদের তুলনায় ছেলেদের চুলে অতিরিক্ত খুশকি বা ড্যানড্রাফ হওয়ার প্রবনতা বেশি। খুশকি হওয়ার মুল কারন একধরনের ছত্রাক, ম্যালাসেজিয়া যা স্ক্যাল্পে এটাক করে এবং স্ক্যাল্পের তেল শোষন করে। স্ক্যাল্প একটু ম্যাসাজ করলেই সাদা বা ধুসর রঙের খুশকিগুলো উপচে পড়তে থাকে! বাইরের ধুলাবালির সংস্পর্শে এসে আপনার চুলে অতিরিক্ত খুশকির প্রবনতা দেখা যায়! এছাড়াও বাড়তি কারন তো আছেই-
প্রধান কারন
• নিয়মিত চুল ধোয়াতে অনিহা।
• ঋতু পরিবর্তন যেমন শীতকালে স্ক্যাল্পে অতিরিক্ত শুষ্কতা অথবা বর্ষাকালে ভেজা ভাব খুশকির প্রবনতা বৃদ্ধি করে।
• হরমোনের সল্পতা অথবা প্রভাবেও খুশকি বৃদ্ধি পায়।
• শ্যাম্পু ব্যবহারে অসচেতনতা।
• নিয়মিত হেয়ার প্রডাক্টসমুহের সাইড ইফেক্টও কারন হতে পারে।
সমাধান
• এন্টি- ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করে আপনার চুলের খুশকি অনেকাংশে কমাতে সক্ষম হবেন।
• কমপক্ষে ২-৩দিন ভালমত চুল ধুলে আপনার স্ক্যাল্পে তৈলাক্ত ভাব থাকবেনা। এতে ম্যালাসেজিয়া আক্রমনের ঝুঁকি কমবে এবং সাথে খুশকিও কমবে।
• আলোভেরা জেল স্ক্যাল্পে ব্যবহারের ফলে আপনি খুব সহজেই খুশকির সমস্যা থেকে হাফ ছেড়ে বাঁচবেন।
• অতিরিক্ত মিষ্টি খাবার, কোল্ড ড্রিংকস, তৈলাক্ত খাবার বা ফাস্টফুড খাওয়া পরিহার করুন। এতে আপনার শরীরে ফ্যাট তো কমবেই, পাশাপাশি চুলে খুশকির উপস্থিতি ও হ্রাস পাবে।
• অমেগা-৩, ফ্যাটি এসিডযুক্ত খাবার খেলেও খুশকি থেকে আপনি রেহাই পাবেন।
৩.রুক্ষ খুষ্ক চুল
চুলের অতিরিক্ত শুষ্কতার সাথে খানিকটা আঠালো ভাবকেই কথায় আমরা রুস্ক খুষ্ক চুল বলে থাকি। সাধারনত, অতিরিক্ত তাপদাহ, সুর্যের ক্ষতিকর রশ্মির প্রভাব ইত্যাদি চুলের স্বাভাবিক আদ্রতা কমিয়ে আনে। ছেলেদের চুলের প্রতি অযত্নে চুল ধীরে ধীরে নিস্প্রান হয়ে যায়। দ্রুত কার্যকরী সমাধান না নিলে চুল পড়া বাড়তে থাকে। নিচে ছেলেদের চুলের রুক্ষতা দূর করার উপায় নিয়ে থাকছে সহজ কিছু টিপস
প্রধান কারন
• গরম বা উষ্ণ পানি দিয়ে চুল ধোয়ার কারনে চুল অতিরিক্ত ড্রাই হয়ে পরে।
• সপ্তাহে তিন দিনের বেশি শ্যাম্পু ব্যবহার করলেও চুলের আদ্রতা কমে যায়।
• দীর্ঘক্ষন রোদের সংস্পর্শে থাকাকালীন ধীরে ধীরে অতিরিক্ত তাপে চুল হয়ে উঠে অধিক রুক্ষ খুষ্ক।
• অধিকাংশ সময় অ্যালকোহল জাতীয় হেয়ার প্রডাক্ট চুলের স্বাভাবিক আদ্রতা কমিয়ে আনে।
সমাধান
• অবশ্যই ঠান্ডা পানি দিয়ে সপ্তাহে ২-৩দিন চুল ভালভাবে পরিষ্কার করবেন।
• চুলের কমলভাব ফিরিয়ে আনতে ময়শ্চরাইজার যুক্ত শ্যম্পু ব্যবহার অধিক উপকারী।
• শ্যাম্পুর পর অবশ্যই কন্ডিশনার ব্যবহার করতে ভুলবেন নাহ।এতে চুলের শুষ্কতা কমবে এটা নিশ্চিত হতে পারেন।
৪.সাদা চুলের উপস্থিতি
অল্প বয়সে বুড়ো ডাক শুনতে কার ই বা ভাল লাগে বলেন তো! সাদা চুল বা পাকা চুল সাধারনত বয়স বৃদ্ধির সাথেই দৃষ্টিগোচর হয়। তবে, তরুন বা যুবক বয়সে যখন আপনার মাথায় সাদা চুলের আবির্ভাব, তখনই চোখ উঠে কপালে!! অনেকে হেয়ার কালার বা কলপ দিয়ে সাদা চুল ডাকতে মরিয়া হয়ে উঠে। চলুন, সাদা চুল দেখা দেয়ার আসল কারনসমুহ জেনে নেয়া যাক!
প্রধান কারন
• চুলের রঙ নির্ধারনে চুলের ফলিকলগুলো মেলানিন নামে রঞ্জক পদার্থ তৈরি করে। বয়সের সাথে সাথে মেলানিন উৎপন্ন হওয়া হ্রাস পায়। ফলে, স্বাভাবিকবাবেই ধুসর বা সাদা রঙের চুল দেখা দেয়।
• বংশগত কারনেও বয়স বৃদ্ধির আগেই সাদা চুল দেখা যায়। যদি আপনার বাবা, মা,দাদা দাদি অথবা বংশের কারও জলদি চুল সাদা হতে দেখা যায়, তবে আপনার হওয়াটাও স্বাভাবিক ধরে স হয়। অনেক সময় এটিকে ইংরেজিতে Premature Graying of hair(PGH) বলা হয়
• শরীরে আয়রন, কপার, ভিটাবিন বি-১২, আয়োডিন ও অমেগা-ত এর ঘাটতির কারনেও সাদা চুল দেখা দেয়।
• অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বা স্ট্রেসের কারনে আপনার শরীরে Norepinephrine নামক কেমিকেলের নিঃসরন ঘটে যা চুলের ফলিকলগুলোকে মেলানিন তৈরী করতে বাঁধা প্রদান করে।
সমাধান
মুলত বংশগত বা বয় বৃদ্ধির কারনে সাদা বা ধুসর রঙ্গের চুলকে ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা নেয়। তবে, অন্যান্য কারনসমুহে যদি ১/২টা পাকা চুল দেখা দেয়,আপনি দ্রুতই সমাধান করতে পারবেন।
• আপনার নিত্যদিনের খাবারে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন ভিটামিন বি-১২ ও অমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার রাখুন।
• প্রাত্যহিক জীবনের স্ট্রেস কমান।
• বাদাম ও বিভিন্ন ফলমুলের বীজ আপনার চুলের কোষসমুহকে অক্সিজেন সাপ্লাই করে এবং সাদা চুল হওয়ার প্রবনতা কমায়।
• পিয়াজের রস, চায়ের লিকার, নারকেল তেল দিয়ে বানানো হেয়ার প্যাক ও এক্ষেত্রে কাজ করে।
টিপসঃ প্রাকৃতিকভাবে চুল কালার করতে মেহেদী প্যাক ব্যবহার করতে পারবেন। কখনো চুলে কৃত্রিম কালার বা কলপ ব্যবহার করবেন না। এতে কিছুদিনপর সব চুলে সাদা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আমাদের ইসলামে পুরুষদের জন্য চুলে কালো কলপ ব্যবহার করা বৈধ নয়।। অতএব, মেহেদী প্যাক ব্যবহার করাই উত্তম।
প্রিয় পাঠকগন, ছেলেদের চুলের প্রধান ৪টি সমস্যা নিয়ে আমি বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করি, আপনারা প্রধান কারনসমুহ চিহ্নিত করে উপরিউক্ত টিপসের মাধ্যমে চুলের এসকল সমস্যা থেকে সমাধান পাবেন। যেকোন প্রশ্ন অথবা নিজের মন্তব্য প্রকাশ করতে কমেন্ট সেকশনে কমেন্ট করতে ভুলবেন না। সুস্থ থাকুন, ভাল থাকুন। আসসালামু আলাইকুম