চুল আঁচড়ানোর সময় চিরুনিতে একাধিক ঝরে পড়া চুলের উপস্থিতি লক্ষ্য করছেন? অধিকাংশ সময়ই চুল পড়া কোন সমস্যা বা রোগ নয়, তবে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যার বেশি চুল পড়লে তখন অবশ্যই তা বিবেচনায় আনতে হবে। কারণ অধিকাংশ সময়েই ঝরে পড়া চুল স্বাস্থ্যের বিরূপ অবস্থা নির্দেশ করে। তাহলে চলুন আপনার চুল ঝরে পড়ার এমন কতকগুলি প্রধান কারণ সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।

চুল পড়ার-Hair fall কয়েকটি প্রধান কারণ
চুল ঝরে পরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাপন খাদ্যাভাস এবং আবহাওয়ার উপরও অনেকটা নির্ভর করে। এছাড়াও আমাদের অভ্যাসের পরিবর্তন এবং কয়েকটি বিশেষ কারণে চুল ঝরে পরা বৃদ্ধি পেতে পারে। চুল পড়ার কারণ কে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়৷ একটি এক্সটার্নাল কারন অন্য টি ইন্টার্নাল কারন।
আসুন তাহলে এক্সটার্নাল কারন টা নিয়েই আগে আলোচনা করি। আপনার নিজের অযত্নের কারনে বা সঠিক পরিচর্যার না করার কারনে বা মাথায় অতিরিক্ত ধুলা বালির জমাকে এক্সটার্নাল কারন বলা হয়। চুল পড়া প্রতিরোধে কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস পেতে চাইলে নিচের বাটনে ক্লিক করুন।
চুল পড়া প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ টিপস
এক্সটার্নাল কারন সমূহ
দুশ্চিন্তা
সুস্থ মানসিক অবস্থা এবং ঘুম চুলের জন্য উপকারী। তবে দুশ্চিন্তা আপনার সুন্দর চুল কেড়ে নিতে পারে। দুশ্চিন্তায় ডুবে থাকা ব্যক্তি বেশিরভাগ সময় হতাশাগ্রস্থ এবং উদ্বিগ্ন থাকে, যা স্বাভাবিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এর ফলে দেহের বেশকিছু পরিবর্তন হয়, এমনকি ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
চুলে অতিরিক্ত হেয়ার স্টাইলার অথবা কেমিকাল এর ব্যবহার
বেশিরভাগ সময়ই পাকা চুল ঢাকতে অথবা স্টাইলের জন্য মানুষ চুলে কৃত্রিম রঙ ব্যবহার করতে পছন্দ করেন। অধিকাংশ চুলের কালারে অ্যামোনিয়ার মতো ক্ষতিকর কিছু কেমিক্যাল মেশানো থাকে, যা চুল ঝরতে সহায়ক এমন প্রধান নিয়ামক গুলোর একটি। আরেকটি ক্ষতিকারক উপাদান হলো চুলে স্টাইল করার জন্য ব্যবহৃত স্টাইলার মেশিন। এই স্টাইলারে সাহায্যে চুলে বিভিন্ন ডিজাইন করতে তাপ ব্যবহার করা হয়। এই অতিরিক্ত তাপ চুলের ময়শ্চার নষ্ট করে এবং চুলকে শুষ্ক, রুক্ষ এবং দূর্বল করে তোলে। ফলসরূপ চুল ভঙ্গুর হয়ে ঝড়ে পড়তে শুরু করে।
ভেজা অবস্থায় চুল আঁচড়ানো
অনেকেই গোসলের পর পরিপাটি হতে এবং নিজেকে সুন্দরভাবে সাজাতে পছন্দ করেন। আর এই সাজগোজের অংশ হিসেবে ভেজা চুল আঁচড়ে পরিপাটি করে নেন। তবে এই কাজটি চুলের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর, যা আমাদের অনেকেরই অজানা। কারণ গোসলের পর চুলের গোড়া ভেজা থাকে এবং নরম থাকে। এই অবস্থায় আলতো টানে গোড়া থেকে চুল উঠে আসে এবং এটি অবশ্যই চুলের জট ছড়ানো উপযুক্ত সময় নয়।
খাদ্যাভ্যাস
সঠিক খাদ্যাভ্যাস চুলে উপকারী প্রভাব বিস্তার করে। খাদ্যতালিকায় ভিটামিনের ঘাটতি এবং পুষ্টির অভাব আপনার চুল ঝরে পড়া ত্বরান্বিত করতে পারে। অধিক পরিমাণ চিনিযুক্ত, চর্বিযুক্ত খাবার আপনার চুলের উপকারের পরিবর্তে চুলের ক্ষতি করে। তাই সুস্থ ও সুন্দর চুল নিশ্চিত করতে আজ থেকেই আপনার খাদ্যাভ্যাসে প্রোটিন, ওমেগা ৩, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থসমৃদ্ধ খাবার যোগ করুন।
ক্ষতিকর অতিবেগুনী রশ্মি
সূর্য থেকে আসা ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি ত্বক ও চুলের জন্য মারাত্মক বিপজ্জনক। এটি চুলকে দুর্বল এবং শুষ্ক করে দেয়, যার কারণে চুল হয়ে পড়ে ভঙ্গুর। এতে আপনার মাথার চুল ঝরে পড়ার পরিমান প্রায় দ্বিগুণ পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে। সুতরাং এই ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচতে সরাসরি সূর্যালোক এড়িয়ে চলুন। এছাড়া হ্যাট, স্কার্ফ অথবা ছাতা ব্যবহার করতে পারেন।
ইন্টার্নাল কারন
বাহ্যিক যত্ন বা পরিচর্যা করা সত্বেও যখন মাত্রাধিক চুল পড়ে তখন, ধরে নিতে হবে শরীরের অভ্যন্তরিন কোন কারনে চুল পড়ছে। চুল পড়ার কারন হিসাবে অভ্যন্তরীন কারনও যে গুরুত্বপূর্ণ তা আমরা অনেকেই জানি না। আসুন আমরা চুল পরার ইন্টার্নাল কারন সুমুহ জেনে নেই।
হরমোন পরিবর্তন
গর্ভাবস্থায় এবং মেনোপজের পরে, মহিলাদের দেহে হরমোন ঘটিত কিছু পরিবর্তন আসতে পারে, যা চুল পড়ার অন্যতম কারণ। অপরদিকে পুরুষদের ক্ষেত্রে বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের হরমোনের গঠনগত কিছু পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়, যা তাদের চুলের বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করতে পারে। এবং ফলসরূপ পুরুষের মাথার ত্বকে টাক সৃষ্টি হয়।
থাইরয়েডের সমস্যা
চুল পড়ার জন্য বহুল পরিচিত হরমোন ঘটিত কারণগুলির মধ্যে একটি হলো থাইরয়েডের সমস্যা। যদি এই সমস্যার সঠিক চিকিৎসা করা হয়, তবে চুল ঝড়ে পড়া প্রতিরোধ করা সম্ভব।
আয়রন এর অভাব
শরীরে আয়রন এর অভাবের জন্যও চুল পড়তে পারে। শরীরে রক্ত সল্পতা হলেও চুল পড়তে পারে। এজন্য চুল ঠিক রাখতে আয়রন জাতীয় খাবার বেশি করে খাওয়া দরকার। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হতে জানি,রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলেও কমে গেলেও চুল পড়তে পারে।
চুলের বিশ্রাম অবস্থা
আমাদের মাথায় এমন কিছু চুল থাকে, যা সঠিকভাবে বৃদ্ধি পায় না। সমগ্র চুলের প্রায় ৯০ ভাগ চুলে সঠিক বৃদ্ধি দেখা যায়, আর বাকি ১০ ভাগ চুল বিশ্রাম অবস্থায় থাকে। সাধারণত এই চুলগুলো ঝরে যায়। তবে এই চুলের গোড়া হতে আবার নতুন পুষ্ট চুল গজায়। অধিকাংশ বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন প্রায় ১০০টি চুল ঝরে পড়া স্বাভাবিক। তবে ব্যাক্তিভেদে ১০০টির চেয়ে কম চুলও পড়তে পারে। আপনার যদি ১০০টিরও বেশি চুল ঝরতে থাকে, তাহলে আপনার একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ বা ট্রিকলোজিস্টের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
গর্ভাবস্থা
গর্ভাবস্থায় মেয়েদের হরমোনের আমুল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। হরমোনের এই দ্রুত পরিবর্তন চুল পড়ার হার বৃদ্ধি করতে পারে। চিকিৎসকদের অভিমতে, গর্ভাবস্থায় মেয়েদের চুল পড়া খুব স্বাভাবিক বিষয়। গর্ভাবস্থা শেষ হওয়ার পরে চুল ঝড়ে পড়ার এই সমস্যার আর থাকে না, তবে এটি স্থায়ী চুল পড়ার সমস্যায় রূপান্তরিত হলে তা চিন্তার বিষয়। সাধারণত, মায়েদের সন্তান জন্মদানের তিন থেকে চার মাসের মধ্যে চুল ঝরে পড়ার এই সমস্যা ঠিক হয়ে যায়।
ঔষধ সাইড এফেক্ট
আপনি কি এই মুহুরতে কোন অ্যান্টিবায়োটিক নিচ্ছেন? যদি নিয়ে থাকেন, তাহলে আপনার চুল পরতে পারে। এছারাও অন্যান্ন ঔষধের কারনেউ চুল পরতে পারে।
কেমোথেরাপি
কেমোথেরাপি, যা ক্যান্সার রোগীদের চিকিৎসা পদ্ধতিগুলোর একটি। এই পদ্ধতিটি নিশ্চিতভাবে চুল ঝড়ে পড়ার একটি বিশেষ কারণ হিসেবে পরিচিত। তবে থাইরয়েডের ওষুধ, গর্ভনিরোধক খাবার পিল, অ্যাকুটেন এবং ডিপ্রেসন প্রতিরোধী ঔষধগুলোও চুল পড়ার উল্লেখযোগ্য কারণ ।
শেষ কথা
“স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল” যা আমরা সবাই জানি। আধুনিকায়নের এই যুগে ব্যস্ততম সময় পার করতে গিয়ে অধিকাংশ সময় আমরা নিজেদের যত্নে অবহেলা করি। তাই এখনই সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে দেহের প্রতিটি অংশের যত্ন নেওয়া উচিত। চুলের যত্ন আপনার জন্য শুধু সুন্দর চুল নিশ্চিত করবে না বরং আপনার দৈহিক মানসিক সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে।