একজন মানুষের অন্যতম সৌন্দর্য হলো তার চুল। আর কথায় আছে “চুন জলে তাজা, চুল তেলে তাজা”। কিন্তু তেলটা অনেক সময় ভালো হয় না, যার জন্য চুল অকালেই ঝরে যায়। চুল আর তাজা থাকার কোন উপায় থাকে না।
এজন্য আপনার চুলে ব্যবহার করা তেলে থাকা দরকার কিছু হারবাল উপাদান, যেগুলো চুলকে করে তুলবে শক্তিশালী, মজবুত, মসৃন। এজন্য তেলটাতে যাবতীয় পুষ্টি উপাদান থাকা বাধ্যতামূলক। আর পুষ্টি উপাদানের কথা বলতে গেলে ক্যামিকেল প্রোডাক্ট এর থেকে ভেষজ ও হারবাল উপাদানগুলো হাজার গুণ ভালো হয়।
তাই অনেকেই চুল পড়া বন্ধ করতে ও স্বাস্থ্যজ্জ্বল চুল পেতে হারবাল তেল ব্যবহার করে থাকেন। কেননা এটিতে অনেক গুলি উপকারি উপাদান একসাথে থাকার নিশ্চয়তা দেয় যা চুল পড়া বন্ধ করে এবং চুল কে তাজা ও স্বাস্থ্যজ্জ্বল করে তোলে ।কিন্তু বাজারে ও বিভিন্ন ফেসবুক এ প্রাপ্ত হারবাল তেল কি আসলেই হারবাল উপাদান দিয়ে তৈরি? সে গুলি বিভিন্ন কেমিকেল দিয়ে তৈরি নয় তো? কারন বিভিন্ন হারবাল উপাদান সংগ্রহ করা সহজ নয় আর এর প্রছেছিং এ জটিলতা তো আছেই ।
তাই একটি এন্টি হেয়ার ফল ওয়েলে কি কি উপাদান থাকা দরকার সেটি জানতেই আজকের আর্টিকেল। ইনশা আল্লাহ এর পর থেকে হারবাল ওয়েল আপনার নিজের ঘরেই বানিয়ে নিতে পারবেন।

মেহেদি
মেহেদি পাতা, আমলকী কিংবা হরিতকী এগুলোর গুণাবলি আমাদের প্রায় সবারই জানা। মাথার ত্বককে মসৃন এবং ঠান্ডা রাখার জন্য মেহেদী পাতার কোনো বিকল্প নেই। চুলের বর্ধনে হোক, কিংবা পুষ্টি জোগাতে মেহেদী পাতা দারুণ উপকারী। এছাড়া মেহেদী পাতার ব্যবহার মাথার ত্বককে ঠান্ডা রাখে।
আমলকী
আমলকীতে আছে ভিটামিন সি, খনিজ, ফাইটো নিউট্রিয়েন্ট। ভিটামিন সি চুলেকে মসৃন রাখার জন্য সহায়ক। এর পাশাপাশি, চুলের মৃত কোষগুলোকে দূর করে চুলকে পুষ্টিসমৃদ্ধ করে তোলে আমলকী। চুলের ঝরে যাওয়া রোধ করতে দরকারি উপাদান গুলো আমলকীতে বিদ্যমান।
হরিতকী
হরিতকীর কথা বলতে গেলে, চুলে দরকারী উপাদানগুলোর মধ্যে অন্যতম এটি। চুলের যত্ন নেয়ার জন্য ত্রিফলা ব্যবহার করেন অনেকেই। আর হরিতকীও কিন্তু সেখানে উপস্থিত থাকে। চুলের গোড়া মজবুত করার জন্য হরিতকী ব্যবহার বেশ ভালো কাজে দেয়। তাই চুল পড়াও সহজে কমে যায়।

মেথি
চুলকে কীভাবে মজবুত করে তুলবেন, সে উপায় খুঁজছেন? তাহলে চুলে মেথি ব্যবহার করুন। মেথি চুলকে একেবারে গোড়া থেকে শক্তিশালী করার পাশাপশি চুলে নিউট্রিশন জোগায়। কারণ, মেথিতে আছে প্রোটিন। আর আছে নিকোটিনিক-ও। যা চুলের ভেতর থেকে পুষ্টি জোগাতে সাহায্য করে।
জটামানসি
জটামানসি এমন একটি উপাদান যা কিনা চুলের বৃদ্ধির জন্য সহায়ক তো বটেই, একই সাথে মাথার ত্বকের প্রদাহ, ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ পুরোপুরি কমিয়ে ফেলতে সক্ষম। এতে থাকা অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান ও অ্যান্টি ইনফ্লেমিটরি চুল পড়া কমিয়ে আনার জন্য উপকারি।
রক্ত জবা
রক্ত জবা আমাদের বাড়ির আশেপাশেও যেকোনো বাগানে ফুটে থাকে। তবে এটি যে আপনার চুলের জন্য কতটা ভালো হতে পারে, তা হয়তো চিন্তাও করতে পারবেন না। এতে থাকা অ্যামাইনো এসিড চুলের একদম গোড়া থেকে পুষ্টি জুগিয়ে চুলকে ঘন তো করেই, একই সাথে চুলকে সুস্থও রাখে। আর চুলের উজ্জ্বলতা বাড়াতেও এর বেশ নামডাক।
নিমপাতা
নিমপাতা তেতো হলেও এর উপকারিতা গুলো দারুণ মিষ্টি। কারণ, চুলে নিমপাতার উপকারের জুড়িমেলা ভার। নিমপাতা ব্যবহার করার ফলে চুল প্রচুর পরিমাণে মজবুত হয়। আপনার মাথার ত্বকে যদি কোনো চুলকানির সমস্যা থাকে, তাহলে তাও দূর করে দেবে নিমপাতা। আর এজন্য আপনার উচিত হবে নিমপাতার উপস্থিতি আছে এমন কোনো তেল ব্যবহার করা। একই সাথে নিমপাতা ব্যবহার করলে চুলের শুষ্ক ও রুক্ষ ভাব কমে যায়। নতুন চুল গজানোর জন্য নিমপাতার ব্যবহার খুবই উপকারী।
কালোজিরা
অন্যান্য সবকিছুর পাশাপাশি চুলের জন্যও দারুন উপকারী একটি উপাদান হলো কালোজিরা। এতে আছে দারুণ সব গুণাবলি। চুল পড়া কমাতে চাইলে, নতুন চুল গজানোর জন্য, চুলের বৃদ্ধি ঘটাতে সব ক্ষেত্রেই কালোজিরা খুব উপকারী।
কেশুতী পাতা
অনেকেরই চুল পেকে যায় তাড়াতাড়ি। এ নিয়ে পড়তে হয় বেশ কিছু বিড়ম্বনায়। তাই, চুলকে অপ্রত্যাশিত সময়ে পাকতে দিতে না চাইলে, অবশ্যই কালো কেশী ব্যবহার করতে হয়। কেউ বা এটাতে কেশুতী পাতা নামে চিনে থাকবেন। এটি চুলকে কালো ও মসৃন রাখতে সহায়তা করার পাশাপাশি, চুলকে স্বাস্থ্যজ্বল করে তোলে। চুল পড়া কমানোর জন্যও অনেকে কালো কেশী ব্যবহার করেন।
একাঙ্গি
একাঙ্গি শব্দটা অনেকর কাছে অচেনা ঠেকতে পারে। তবে একাঙ্গী আসলে এক ধরণের সুবাসিত আদা। এটাতে আছে বিভিন্ন অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা কিনা চুলকে মসৃন করার জন্য উপযুক্ত। চুলের বৃদ্ধিতে একাঙ্গী অনেক উপকারী একটি ভেষজ উপাদান।
পেঁয়াজ
চুলের যত্নে পেঁয়াজ একটি অসাধারন উপাদান। এটি মাথার ত্বক এর এসিডিটির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে।চুলের গড়া শক্ত করে। এটি চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, এতে রয়েছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা চুলে ঘনভাব আনে ও উজ্জ্বলতা বাড়ায়, চুল পেকে যাওয়ার প্রবনতা কমায়।
কারি পাতা
কারি পাতা চেনেন তো? অনেকে আবার তেজপাতা নামেই ভালো চিনতে পারবেন। এটা সবার বাসায় থাকে। তবে চুলে যদি এর প্রয়োগ করা যায়, তাহলে তা হবে সবচেয়ে জাদুকরি। কারি পাতায় উপস্থিত আছে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি । এজন্য মাথায় ত্বককে স্বাভাবিক রেখে ময়েশ্চারাইজিং করতে বেশ উপকারী এটা। চুলের মৃত কোষগুলোকে তাড়িয়ে নতুন কোষ গঠনে সাহায্য করে কারি পাতা। একই সাথে কারি পাতায় বিদ্যমান বিটা ক্যারোটিন আর প্রোটিন চুলকে ঘন করে তোলে আর পাতলা চুলের পরিমাণ কমিয়ে আনে। চুলের বৃদ্ধিতেও এর জুড়ি মেলা ভার।
এক্সট্রা ভার্জিন কোকোনাট অয়েল
চুলের যত্নে প্রথমেই উঠে আসে এক্সট্রা ভার্জিন কোকোনাট অয়েলের কথা। চুলকে সুস্থ রাখতে প্রাচীনকাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এই নারকেল তেল। চুলের ফ্রিজি ভাব কমাতে আমরা শ্যাম্পুর পর চুলে কন্ডিশনার প্রয়োগ করি। তবে নারকেল তেল চুলের ফ্রিজি ভাব অনেকটা কমিয়ে আনে। তাই নারকেল তেলই সবচেয়ে উত্তম কন্ডিশনার। চুলকে নরম ও মসৃন করার জন্য চুলে এর প্রয়োগ করার দরকার। ন্যাচারাল এই কন্ডিশনার চুলকে ভঙ্গুর অবস্থা থেকে মুক্ত করে এবং চুলকে ঘন করে, চুলের৷ সব ধরনের ড্যামেজগুলোকেও রিপেয়ার করে ফেলে।
এছাড়াও নারকেল তেলে আছে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল যা মাথার ত্বক এ ফাঙ্গাস প্রতিরোধ করে। যার জন্য চুলের গ্রোথ ভালো হয়। চুলকে খুশকি থেকে মুক্ত করার জন্য কোকোনাট অয়েলের চেয়ে উপকারী কিছু নেই। এমনকি উকুন দূর করতেও সহায়ক এটি। চুলকে উকুনমুক্ত বা খুশকিমুক্ত করতে চাইলে কোকোনাট অয়েল কার্যকরী।
এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল
এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলের ক্ষেত্রে ব্যপারটা অন্যরকম। কারণ, এখন অলিভ অয়েল ভার্জিন রূপে পাওয়া যায় না সহজে। কোনো তেলকে যখন রিফাইন না করে, সরাসরি সেল করা হয়, সেটাই এক্সট্রা ভার্জিন। তো, এই তেলে বিদ্যমান উপাদানগুলো চুলের পুষ্টি বৃদ্ধিতে সহায়ক। অলিভ অয়েল খাওয়া থেকে শুরু করে প্রায় সব কাজেই ব্যবহার করা হয়। তবে চুলের জন্য অলিভ অয়েল ভালো একটি প্রোডাক্ট।
ক্যাস্টর অয়েল
ক্যাস্টর অয়েলও অনেকেই আালাদাভাবে চুলে প্রয়োগ করে থাকেন। চুলে ক্যাস্টর অয়েলের ম্যাসাজ রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয়। আবার, চুলের বৃদ্ধির জন্য অনেকে ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করেন। চুলের কোষগুলোকে সতেজ রাখতে সহায়ক এই ক্যাস্টর অয়েল।
সূর্যমুখী তেল
সূর্যমুখী তেল যে মাথার চুলের জন্য উপকারি এটা অনেকেরই অজানা। এটা আসলে প্রাকৃতিক ভিটামিন ই। আরও এতে আছে লিনোলিক এসিড। যার জন্য চুলে এর প্রয়োগ চুলকে সামান্য সময়ের মধ্যেই মসৃন ও স্বাস্থ্যজ্জ্বল করে তোলে। কারণ, লিনোলিক এসিডের কাজই হলো ত্বক বা চুলকে মসৃন করে তোলা। সূর্যমুখী তেল চুলে ব্যবহার করলে চুল পড়া কমতে থাকে আর, চুল দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
তো, উপরে আমরা যেই পুষ্টি উপাদান গুলোর কথা বললাম তা সবই চুলের জন্য প্রচুর উপকারী। কিন্তু, সবগুলো যদি আলাদা ভাবে ব্যবহার করতে যান, তাহলে ঝামেলা তো আছেই, আবার বেশি খরচাও। তাছাড়া অনুপাতটাও ঠিক থাকবে না। তাই চুলের প্রবলেমও দেখা দিতে পারে।
এজন্য যদি সবগুলো উপাদানকে সঠিক অনুপাতে একত্রিত করা যায়, তাহলে তো তা চুলকে পুরোদমে ঝলমল করে তুলবে আর চুল পড়া বন্ধ হয়ে যাবে। তবে এমন পিউর হারবাল ব্লেন্ড এর তেল পাওয়া একেবারে সহজ নয়।
তাই আপনি চাইলে একটি এন্টি হেয়ার ফল ওয়েল পরখ করে দেখতে পারেন। উপরে উল্লেখিত সবগুলো ভেষজ উপাদান সহ আর মোট ত্রিশটি উপাদানের পারফেক্ট মিক্সচারে তৈরি হয় জান্নাত অ্যান্টি হেয়ার ফল অয়েল। তাও সাশ্রয়ী মূল্যে।

এন্টি হেয়ার ফল অয়েল এখানে দেখুন
এটি ব্যবহার করার ফলে আপনার চুল পড়া কমে যাবে। চুলের ঔজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পেয়ে চুল হবে আরো সুন্দর। নতুন চুল গজাতেও আপনাকে সাহায্য করবে তেলটি। এছাড়া, মাথার চামড়ার মৃত কোষগুলো দূর করে নতুন কোষ তৈরি হবে। ফলে মাথার চামড়াও থাকে সুরক্ষিত, উকুনমুক্ত ও খুশকিমুক্ত।
সুতরাং, চুলের সব সমস্যার সমাধান যদি এক তেলেই করতে চান, তাহলে আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে জান্নাত অ্যান্টি হেয়ার ফল অয়েল।