চুল একজন মানুষের ব্যক্তিত্ব ও সৌন্দর্যের প্রতীক। কিন্তু এই চুলের আমরা কত টুকুন ই বা জানি। যখন চুল পড়া শুরু হয় বা চুল নিয়ে কোন সমস্যা হয় তখন ই আমরা চুল নিয়ে চিন্তা ভাবনা করি। চুল নিয়ে সঠিক তথ্য না জানার কারনে অনেক সমস্যার সহজ সমাধানাও করতে পারি না।
সবচেয়ে বড় কথা চুল নিয়ে আমাদের অনেক ভুল ধরণা কেটে যাবে আর নিজের প্রিয় চুল সম্পর্কে জানতে পারবো। তাই আজকের আর্টিকেল চুলের এনাটমি( Hair anatomy)বা চুলের গঠন নিয়ে। বরাবর এর মতই চেষ্টা করবো সব কিছু খুব সহজে লিখার। তাই একটু সময় নিয়ে পুরো লিখাটা পড়ে ফেলুন।
ব্যক্তি ও চুলের প্রকার ভেদে চুল সাধারনত দুই ধরনের হয়ে থাকে। কারও ক্ষেত্রে চুল সাধারনত লম্বা হয় আবার কারও ক্ষেত্রে চুল একটু শর্ট হয়। এটা নির্ভর করে আপনার বংশ ও শরীরের অন্তস্থ হরমোন এর কারনে। তবে সব প্রকার চুলের গঠন প্রায় একই রকম।
হেয়ার স্ট্রাকচার
চুলের প্রধানত দুটি অংশ থাকে। একটি হল হেয়ার শ্যাফট অন্যটি হল হেয়ার রুট।
হেয়ার শ্যাফট হল চুলের ভিজিবল পার্ট যা আমরা দেখতে পাই আর হেয়ার রুট থাকে স্কিনের গভীরে যা আমরা দেখতে পাই না। কিন্তু চুলের মেইন গঠন কাঠামো আর চুলের বৃদ্ধি ও কালার সবি নিয়ন্ত্রণত হয় এই হেয়ার রুট থেকে। নিচের চিত্রের দিকে খেয়াল করুন। হেয়ার রুট আমাদের স্কিনের উপরের দুই লেয়ার এপিডার্মিস ও ডার্মিস পর্যন্ত বিস্তৃত।
HAIR ANATOMY by FATIEH
এই রুট টি একটি লেয়ার দ্বারা আবৃত যাকে মেডিকেলের ভাষায় ফলিকল বলা হয়। এই ফলিকল কিছু কানেক্টিভি টিস্যু ও স্কিন লেয়ার দ্বারা তৈরি। ফলিকল আবার সেবাকাস গ্লান্ড এর সাথেও কানেক্টেড থাকে। হেয়ার ফলিকল এরেপ্টর পিলি নামক একটি মাসল এর সাথে যুক্ত। এই মাসল আমাদের চুল উপরের দিকে উঠতে সহায়তা করে।
একটু নিচের দিকে খেয়াল করলে দেখা যাবে কিছু নার্ভ ও যুক্ত হেয়ার ফলিকল এর সাথে। এই নার্ভ আমাদের চুলের স্পর্শের অনুভূতী দেয়।
হেয়ার রুট এর সবচেয়ে নিচে গোলাকার অংশের নাম হল বাল্ব। এই বাল্বেই চুলের উৎপাদন বা জন্ম হয়।
এই বাল্বের নিচে হেয়ার প্যাপিলা যেটি যুক্ত থাকে ব্লাড ভেসেলের সাথে। হেয়ার প্যাপিলা এই ব্লাড ভেসেল থেকে রক্ত নিয়ে হেয়ার বাল্ব এ সপ্লাই করে। অর্থাৎ চুলের গোড়ায় রক্তের মাধ্যমে আমাদের শরীর থেকে পুষ্টি সরবরাহ করে। যা চুলের বৃদ্ধির জন্য খুবই সহায়ক।
এখন নিশ্চই বুজতে পারছেন কি করে আমাদের চুল শরীর থেকে পুষ্টি সংগ্রহ করে।
হেয়ার গ্রোথ
হেয়ার বাল্ব এ প্রতিনিয়তই কোষ বিভাজনের মাধ্যমে নতুন নতুন হেয়ার কোষ তৈরি হয়। এই নতুম কোষ প্রকৃতিক ভাবেই একটি অন্য টির সাথে যুক্ত হয়। এভাবে একটি লম্বা হেয়ার তৈরি হয় যা পরবর্তীতে মাথার বাইরে চলে আসে আমাদের প্রিয় চুল হিসাবে।
প্রতিমাসে চুলের গ্রোথ প্রায় ১সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে।
হেয়ার শেইপ
হেয়ার শেইপ ডিপেন্ড করে হেয়ারের ক্রস সেকশনের উপর ভিত্তি করে। ক্রস সেকশন রাউন্ড হলে চুল স্ট্রেইট শেইপের হয়। আর ক্রস সেকশন ওভাল শেইপ এর হলে সাই চুল কার্লি হয়।
হেয়ার কম্পোজিশন
আমরা অনেকেই জানি না যে চুল কি দিয়ে তৈরি। আপনার চুলের ৯০% যা কেরাটিন নামক প্রটিন দিয়ে তৈরি। আর ১৫% হল পানি। লিপিড নামক এক ধরনের পদার্থ আছে যেটা প্রায় ৩% এর মত। ১% -২% আছে মেলানিন যা আমাদের চুলের রঙ এর দরকারি। এ ছাড়াও জিঙ্ক, আয়রন, কপার আছে ১% এর মত।
সুতারাং আমরা উপরের প্যারা থেকে সহজেই বুজতেই পারছি, চুল ভালো রাখার জন্য আমাদের কি ধরনের খাদ্যভ্যাস গড়ে তোলা দরকার। কারন আমরা যদি প্রটিন সমৃদ্ধ খাবার গ্রহন না করি তাহলে আমাদের চুল ভঙ্গুর হয়ে যাবে। আর পর্যাপ্ত পানি পান না করলে আর ভালো তেল ব্যবহার না করলে চুল শুষ্ক হয়ে যায়। আর মিনারেলস এর জন্য দরকার সুষম খাবার গ্রহন করা।
আজ এ পর্যন্তই। আশা করি এই তথ্য গুলি আপনাদের ভাল লেগেছে। আর যদি ভাল লাগে তাহলে অবশ্যই নিচের কমেন্ট এ জানাবেন আর শেয়ার দিবেন। আর চুলের যত্নের ব্যাপারে আরও কিছু জানতে চাই সেটাও কমেন্ট এ জানাতে পারেন।